Power Sector of Bangladesh  

বাংলাদেশে বেইজ পাওয়ায় প্লান্ট এ বিষয়টা একদম নতুন। পায়রার প্রডাকশনে যাওয়ার পর এটা বাংলাদেশের প্রথম বেইজ পাওয়ার প্লান্ট হিসেবে আর্বিভাব হয়েছে যার ক্যাপাসিটি ১৩২০ মেগাওয়াট।  এটা এখন পুর্ণ সক্ষমতায় চলছে। কিন্তু ঋণের টাকা এবং কয়লার দাম পরিশোধ করতে পায়রা খুবই হিমশিম খাচ্ছে। পায়রাতে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা(পিডিবি)।

বড়পুকুড়িয়ায় নিজস্ব কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বচ্চ খরচ হয় ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। এটার উৎপাদন ক্ষমতা ৫৭৫ মেগাওয়াট হলেও ( তিনটি ইউনিট ) কয়লা সংকটে ৫০%-৬০% বিদ্যুৎ এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

রামপাল পাওয়ার প্লান্ট প্রডাকশন শুরু করেছে। এখান থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ হবে ১৪ টাকার কাছাকাছি।

ভারতের ঝাড়খণ্ড এর গড্ডা পাওয়ায় প্লান্ট থেকে আদানির বিদ্যুৎ আনতে খরচ হবে ১৭ টাকার বেশি।

এছাড়া বাংলাদেশের সবথেকে ব্যায়বহুল কোল পাওয়ার প্লান্ট মাতারবারি বানাতে খরচ হচ্ছে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি। জাপানের সহায়তায় করা এই পাওয়ার প্লান্ট এ যা খরচ  হচ্ছে তা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট এর থেকেও বেশি কম্পেয়ার করলে। রূপপুরে  ২৪০০ মেগাওয়াটের আনবিক পাওয়ার প্লান্ট বানাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।  অবশ্য মতারবারিতে ভূমি উন্নয়ন ও চ্যানেল খননের ব্যাপার ছিল যার সুবাদে মাতারবারি গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে ২ বিলিয়ন ডলারে।  পাওয়ার প্লান্ট এর কাজ না হলে এখানে ডিপ সি পোর্ট করতে ৪ ৫ বিলিয়ন ডলারই লাগতো। পাশাপাশি আরো কিছু কাজ করা হয়েছে মাতারবারি পাওয়ার প্লান্ট এর সাথে যা মহেশখালি দীপে অন্যান্য প্রজেক্ট করার রাস্তা করে দিয়েছে।  এর পরেও বলতে হবে মাতারবারি পাওয়ার প্লান্টের খরচ অত্যাধিক বেশি।

তাহলে সরকারের হাতে থাকা কোলবেজ পাওয়ায় প্লান্ট গুলো একবার দেখে নেওয়া যাক

১. পায়রাঃ ১৩২০ মে ও

২. রামপালঃ ১৩২০ মে ও

৩.মাতারবারিঃ ১২০০ মে ও

৪. বড়পুকুড়িয়াঃ ৫২৫ মে ও

৫. বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারঃ ৩৫০ মে ও 

মোটঃ ৪৭১৫ মেগাওয়াট

গড্ডা থেকে 'আদানির' বিদ্যুৎ আসবে ১৬০০ মেগাওয়াট।

এছাড়াও চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের অধিনে এস এস পাওয়ার প্লান্ট বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রাইভেট কোন গ্রুপ ১৩২০ মেগাওয়াটের কোল বেইজ পাওয়ার প্লান্ট বানাচ্ছে।  ০৬ জুন ২০২৩ তারিখে আনুষ্ঠানিক ভাবে এটি জাতিয় গ্রিডে যুক্ত হয়।

অর্থাৎ দেশে কোল জেনারেটের পাওয়ার হবে

>৪৭১৫+১৬০০+১৩২০= ৭৬৩৫ মেগাওয়াট।

এখন আসি চিন্তার বিষয়ে,

পায়রা, মাতারবারি, এস আলম, রামপাল এই চারটার মধ্যে শুধু পায়রা পাওয়ার প্লান্টের কোল আমদানির জন্য লং-টার্ম চুক্তি আছে ইন্দোনেশিয়ার সাথে। পায়রা পাওয়ার প্লান্ট এর অর্ধেক অংশীদার চায়না এবং তদের ইন্দোনেশিয়ায় থাকা মাইন থেকে কয়লা এনেও পাওয়ার প্লান্টটা হিমশিম খাচ্ছে খরচ এবং উৎপাদন উভয় দিক দিয়েই। তাহলে রামপাল,  মাতারবারি,  এস আলম এর কি অবস্থা হবে চিন্তার বিষয়।

Ruppur Nuclear Power Plant

Ruppur Nuclear Power Plant 

এছাড়াও সরকার পায়রাতে এবং মাতারবারি তে আরো  দুটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও মাতারবারিতে  হওয়ার সম্ভাবনা কম  কারন জাপান বাংলাদেশে কোল বেইজ আর কোন পাওয়ার প্লান্ট এ ইনভেস্ট করবেনা বলে দিয়েছে তবে পায়রাতে আর একটা পাওয়ার প্লান্ট বানানোর জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশর বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদা বছরের কোন এক পর্যায়ে সর্বচ্চ ১৬০০ মেগাওয়াট (জানুয়ারি ২০২৩) এর আসে পাশে।  আগামী দুই তিন বছরে এটা ১৭০০০+  হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রে ৭০০০ বা প্রায় অর্ধেক সরকার যোগান দিবে কয়লা  থেকে। এখন কয়লার দামও কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে দেশে অসন্তুষ্টি দিন দিন বাড়ছে।

আদানির সাথে চুক্তি দেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ ফেলবে যা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। চুক্তির কিছু ধারা নিয়ে খোদ বিদ্যুৎ বিভাগেই অস্বস্তি  রয়েছে।   আদানির  সাথে চুক্তি অনুযায়ী মোট উৎপাদনের ৩৪ শতাংশ এর নিচে বিদ্যুৎ গ্রহণ করলেও সরকারকে পূর্ণ অর্থই প্রদান করতে হবে (বিবিসি, বিদ্যুৎ বিভাগ) । এছাড়াও তৃতীয় কোন পক্ষে  বিদ্যুৎ বিভাগ এ  বিদ্যুৎ  বিক্রি করতে পারবে কিনা তা নিয়ে  ঘোলাসা রয়েছে। আরেকটি বড় চিন্তার বিষয় হলো  আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা কেনার বিষয়টি এবং এর মূল্য  বিষয়ে যে নীতিমালা গৃহীত হয়েছে তা থেকে  আদানি চাইলে কয়লার চড়া মূল্য  দেখিয়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ না নেওয়া সত্বেও চড়া ক্যাপাসিটি চার্জ  দেয়ার বিষয়টা তো রয়েছেই। 

এসব কারণে সরকারের ভেতর থেকেই এ প্রকল্প এবং চুক্তি  থেকে সরে আসার জন্য  বিষয়টি বারবার তোলা হচ্ছে।  তবে এ চুক্তির সাথে ভারত বাংলাদেশের একটা বড় পলিটিকাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে  আর যেহেতু  আদানীর  সাথে মোদি সরকারের  সম্পর্ক বেশ উষ্ণ  তাই  এর ভবিষ্যৎ কি হবে  তা বলা মুশকিল।  এখন দেখার বিষয় কয়লার দাম, ডলার সংকট,  ঋণের কিস্তি  বোঝা , পরিবেশ ইস্যু, পশ্চিমা চাপ,  রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নির্বাচন এর সংমিশ্রণ আমাদের পাওয়ার সেক্টরকে  কোথায় নিয়ে যায়।