আমেরিকার দেনা আর আমাদের সম্ভাবনা


বর্তমানে আমেরিকার ফেডারেল সরকার  বা কেন্দ্রীয় সরকারের মোট দেনার পরিমাণ  [ Public Debt]   28 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা  28000 বিলিয়ন ডলার  যা  2020 সালের আমেরিকার জিডিপির থেকেও  প্রায় 07 বিলিয়ন মার্কিন ডলার  বেশি। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে  2 ট্রিলিয়ন ডলারের  বিশাল একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন মুলক কাজের রূপরেখা তুলে ধরেন যা  করোনার ফলে আমেরিকার অর্থনীতিতে যে মন্দা  দেখা দিয়েছে সেখান থেকে উত্তরণের জন্য বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে । এতে করে আমেরিকার যে দেনা আছে সেটা আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। এই বিশাল দেনা  কি তাহলে আমেরিকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে ? 


না। আমেরিকার অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মতন নয়।  একে  মচকানো যাবে  , আঘাত করা যাবে  তবে ভেঙে ফেলা বা নির্মূল করা তাত্ত্বিকভাবেও সম্ভব নয় এখন। তাহলে আমেরিকার এত বড় ঋণের বোঝা  কি কোন ক্ষতিই সাধন করতে পারবেনা? বাস্তবতা হলো  আমেরিকার ঋণ  আর বিশ্বের অবশিষ্ট 233 টি দেশের  ঋণ এর বিষয়টা একদমই আলাদা। 


[একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছর বা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন হয় এবং সেবামূলক কাজ সম্পাদন হয় তার আর্থিক  মূল্যকে জিডিপি  বা গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট  বলে] 


 বাংলাদেশ সরকারের মোট  দেনার পরিমাণ 2020 সাল  পর্যন্ত ছিল ১০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 16 কোটি জনসংখ্যার ধরলে জনপ্রতি  দেনার পরিমাণ 57 হাজার 263 টাকা।  এর ভিতর  42 বিলিয়ন মার্কিন ডলার  বৈদেশিক পাওনা, যা  আগের অর্থবছরের থেকে প্রায় 10 শতাংশ বেশি [  2019 সালে বৈদেশিক পাওনা ছিল  38 বিলিয়ন মার্কিন ডলার]। অপরদিকে 2020 সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল 324 দশমিক 2 বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মোট জাতীয় দেনা  জিডিপির প্রায় 30 শতাংশ, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এই সংখ্যাটা  রিজনাবল তবে বৃদ্ধির হার নিয়ে  অর্থনীতিবিদরা শঙ্কিত।



অপরদিকে 2020 সালে আমেরিকা ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ছিল 20 দশমিক 94  ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে আমেরিকার দেনার পরিমাণ  28 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ।  তাহলে পার্থক্যটা কোথায়, যেখানে বাংলাদেশের সামগ্রিক দেনা জিডিপির তিন ভাগের এক ভাগ  হতেই  সুশীল  মহল এবং অর্থনীতিবিদদের চিন্তার  ভাঁজ পড়া শুরু হয়ে গেছে, অপরদিকে  আমেরিকার পাওনা তাদের জিডিপির 25 শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরেও এ বিষয়ে তাদের তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই ।  বরং তারা এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা দিয়ে পাওনা আরো বৃদ্ধি পাবে! 



 প্রথমে বাংলাদেশের কথা বলি  বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সোর্স থেকে যা আয় করে তার প্রায় পুরোটাই চলে যায় দেশে পরিচালন ব্যয়ে। 2021- 22 অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট
  • বাজেটের আকারঃ                              6 লাখ 3 হাজার 681 কোটি টাকা

  •  মোট আয়ঃ                                           3 লাখ 92 হাজার 490 কোটি টাকা

  •  মোট পরিচালন ব্যায়ঃ                        3 লাখ 78 হাজার 357 কোটি টাকা

  •  সামগ্রিক উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয়ঃ 2 লাখ ২৫ হাজার 324 কোটি টাকা

  • বাজেটের ঘাটতিঃ                              2 লাখ 14 হাজার 680 কোটি টাকা




N.B: পূর্ববর্তী ঋণের সুদ এবং কিস্তির টাকা পরিচালন ব্যয় এর অন্তর্গত। 


অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের আয়ের   প্রায় পুরোটাই চলে যায় পরিচালন ব্যয়ে এবং বর্তমানে উন্নয়নমূলক কাজের সম্পূর্ণটাই  অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত ঋণ এবং অনুদান থেকে পরিশোধ করা হয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় আরো দুই দশক বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারা  একই রকম থাকবে। স্ট্যাটিসটা ডটকম এর তথ্য অনুযায়ী 2026 সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় দেনার পরিমাণ ২৬0 বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে । তবে একই সময়ে বাংলাদেশের জিডিপিও বর্তমান  এর দ্বিগুণ আকারে পরিণত হবে। বড় কোন অর্থনৈতিক ডিজাস্টার না ঘটলে  এবং মুদ্রাস্ফীতি  ও মূল্যস্ফীতি 5-6 শতাংশের ঘরে থাকলে জাতীয় দেনার পরিমাণ জিডিপি এর 30 থেকে 40 শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করা যায়। 



অর্থনীতির কিছু জটিলতা আছে।  একটা দেশের অর্থনীতি বড় করার পেছনে  মূলত  চারটা উপাদান অবদান রাখে,  


  • মুনাফা মূলক রপ্তানি

  • বৈদেশিক  এবং অভ্যন্তরীণ অনুদান ও  বিনিয়োগ

  •  বৈদেশিক  এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ

  • কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা অভ্যন্তরীণ অ্যাসেট বৃদ্ধি এবং সে অনুযায়ী মুদ্রা ছাপানো 



বাংলাদেশের  রিসোর্স  খুব বেশি না হওয়ায় প্রথম তিনটির উপরেই  সরকারের মনোযোগ দিতে হয় অর্থনীতির আকার বড় করার জন্য। মোদ্দা কথা হল অর্থনীতির আকার বড় করার জন্য ঋণ অথবা অন্য কোন উপায়ে বাজারে নতুন করে  টাকা নিয়ে আসতে হবে। এখন  Industrialism বিশ্বব্যাপী এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কোনো দেশে চাইলেও অর্থনীতিকে  নিউট্রাল অবস্থায় রেখে দিতে পারবেনা।  টিকে থাকতে হলে অবশ্যই   বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এজন্য একটা দেশকে অবশ্যই মুনাফা মূলক রফতানি নতুন,  বিনিয়োগ কিংবা ঋণের টাকা দিয়ে হলেও দেশের অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আসতে হয়। তাই বলা যায়  উন্নয়নশীল একটা দেশের জন্য বৈদেশিক এবং দেশীয় ঋণ একটি নেসেসারি এভিল । 


এখন সরাসরি বৈদেশিক ঋণের টাকা দেশের জনগণের মধ্যে বিতরণ করা তো সম্ভব নয়।  সে কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে  ঋণের টাকা ব্যয় করা হয়।  এর ফলে বড় পরিমাণ একটা টাকা  দেশের সাধারণ জনগণের হাতে চলে আসে এবং সেটার সার্কুলেশন এর মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।  তবে এখানে একটি বড় ব্যাপার হল, যদি  অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রা ছাপানো,  অত্যাধিক উন্নয়নমূলক কাজ,  এবং বিভিন্ন  উপায়ে  অতিরিক্ত টাকা বাজারে চলে আসে তখন মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  সম্প্রতি  ভেনেজুয়েলা তে যেটা হয়েছে। 


বাংলাদেশ সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন , অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অন্যান্য খাতে ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতির আকার  বড় করে  তুলছে।   এক্ষেত্রে বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ এ বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে ।  তবে  দুটোর ইফেক্ট একদমই আলাদা।


 বৈদেশিক ঋণ শোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটা  ভ্যালুয়েবল কনকারেন্সি দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। অথবা যেই দেশের কাছ থেকে  বা যেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে  যে নির্দিষ্ট কারেন্সিতে ঋণ নেওয়া হয়েছে সে কারেন্সিতে তা পরিশোধ করতে হয়।  মার্কিন ডলার বা আমেরিকান ডলার সবথেকে শক্তিশালী কারেন্সি,  এরপরে  ইউরো , পাউন্ড এবং চায়নার  ইয়ানের  অবস্থান। ধরা যাক,  বাংলাদেশ সরকার চায়নার কাছ থেকে 10 বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ঋণ নিয়েছে।  এখন এই ঋণ  বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই  এমন কোন কারেন্সিতে পরিশোধ করতে হবে যেটা চায়না গ্রহণ করবে।  বাংলাদেশের কাছে  জমা থাকা  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে  এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবে।  বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।  একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের  আকার যদি বড় না হয় তাহলে আমদানি এবং ঋণের টাকা পরিশোধ করতে সেই দেশকে  প্রচুর বেগ পেতে হয় ।  2018 সালের দিকে পাকিস্তানের সাথে যেটা হয়েছিল, বর্তমানে শ্রীলংকার যে পরিস্থিতিতে রয়েছে।  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় পাকিস্তান  আমদানি এবং   ঋণের টাকা পরিশোধ করতে  হিমশিম খাচ্ছিল। এমন অবস্থায় সৌদি আরব পাকিস্তানকে প্রায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা প্রদান করে  পূর্ববর্তী ঋণের কিস্তি মিটানো এবং  আমদানি ব্যয়  পরিশোধের জন্য । সাম্প্রতিক সময়ে  বাংলাদেশ একই  ভাবে শ্রীলঙ্কাকে মোট 250 মিলিয়ন  মার্কিন ডলার সমমূল্যের কারেন্সি   লোন হিসেবে দিচ্ছে। 

অর্থাৎ এ থেকে বোঝা যায় যে বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে তা পরিষদের ঝুঁকি  একটি দেশকে   ব্যাকওয়ার্ড পজিশনে ফেলে দিতে পারে।


অপরদিকে রাষ্ট্রের  অভ্যন্তরীণ দেনা কে  বাস্তবিকপক্ষে ঠিক দেনা বলা যায় না।  এর প্রধান কারণ রাষ্ট্রে যে কারেন্সি বা অর্থ ব্যবস্থা প্রচলিত তার সম্পূর্ণটাই রাষ্ট্রের তথা সরকারের দ্বারা ইস্যুকৃত। দেশের অভ্যন্তরের  দেনা সরকার প্রয়োজনবোধে নতুন করে টাকা  ছাপিয়েও পরিশোধ করতে পারবে। যেহেতু সরকার নিজেই টাকা ছাপিয়ে  বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে,  তাহলে আমরা সরকারকে বলতে পারি যে বেশি করে টাকা  ছাপিয়ে তা গরিব মানুষের হাতে দিয়ে দেওয়া হোক,  তাহলে তো দেশের সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়।   তবে বিষয়টা এত সহজ না,  এক্ষেত্রে  অনেক জটিলতাও আছে। 


হ্যাঁ সরকার চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে  এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো নিয়ম নেই  যে  আপনি টাকা ছাপাতে পারবেন না, বা নির্দিষ্ট  পরিমাণ টাকা আপনাকে ছাপাতে হবে। তবে মজার বেপার হলো   নিজের স্বার্থেই  সরকার  চাইলেও  অনিয়ন্ত্রিতভাবে  টাকা ছাপাতে পারে না। 


সরকার যখন নতুন করে টাকা বাজারে   আনে  তখন এটা বাজারের  মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতি দুটোকেই বাড়িয়ে দেয়।  ধরুন আপনার দৈনিক বেতন 100 টাকা।   সারাদিনের যাবতীয় খরচ আপনাকে এই টাকার  ভিতরেই করতে হবে।  তাহলে আপনি কি করবেন ?   লিমিটেড বাজেট থাকলে আমরা  হিসেব করে চলি এবং কিভাবে ওই অর্থের ভিতর দিয়েই সকল দায় পরিশোধ করা যায় সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করি। আপনার কাছে 100 টাকা থাকলে আপনি 100 টাকা দিয়েই দিনের  সকল চাহিদা মেটাবেন।  এখন দেখা গেল হুট করে  আপনার   বেতন 500 টাকা হয়ে গেছে,  এবং প্রতিদিন আপনি এই 500 টাকা খরচ করার স্বাধীনতা পাচ্ছেন।  তাহলে কি হবে?  আপনার খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে  এবং আপনি চাইবেন কিছু টাকা সংরক্ষণ করতে।  এখন ভেবে দেখুন তো  যদি  দেশের সকল চাকরিজীবীর  বেতন এভাবে হুট করে বেড়ে যায়  তাহলে সেটার  কি ইফেক্ট পরতে পারে? সকল  চাকুরীজীবির হাতে যখন অস্বাভাবিক ভাবে  অর্থ বৃদ্ধি পাবে  তখন স্বভাবতই তাদের খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা যখন দেখবে চাকরিজীবীদের আয় বেড়ে গেছে তখন স্বভাবতই তারাও তাদের দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিবে।  ঠিক কিছুদিন পর যদি চাকরিজীবীদের বেতন আবার বাড়ে  তাহলে একই ঘটনা পুনোরাবৃত্তি হবে ।  টাকার অবমূল্যায়ন দেখা দিবে।  বাজারে এই অত্যাধিক টাকা মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করবে,  দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পেতে মূল্যস্ফীতি চরম রূপ ধারণ করবে।  2015 সালে যখন বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের  বেতন প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি করেন  তারপর   দেশের অর্থনীতি প্রায়ই এমন এক ঘটনার সম্মুখীন হয়।  যা কারো জন্যই ভালো নয়। 


সুতরাং দেশের মুদ্রাস্ফীতি মূল্যস্ফীতি  ঠিক  রাখতে হলে  অবশ্যই সরকারকে পরিমিত টাকা বাজারে আনতে হয় । 


তাহলে কেন আমরা বলছি যে অভ্যন্তরীণ ঋণ  আসলে দেনা নয়? 

 সরকার সাধারণ জনগনের  জন্য সরকার যা খরচ করে  সেটা যদি  ট্যাক্স থেকে  উত্তোলন করতে না পারে তবে যে ঘাটতি থাকে  সেটাই  সরকারের  দেনা। এখন অভ্যন্তরীণ দেনা সরকার যদি নতুন টাকা ছাপিয়ে পরিশোধ করতে যায়  তাহলে দেশের চরম আকারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে  এবং মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল কি ভেনেজুয়েলা দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন।  তাই সরকার  এই ঘাটতি  মিটানোর জন্য  আপনার-আমার সেভিংস থেকে  টাকা লোন নেয়। সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে,  বন্ডের মাধ্যমে, সরকার প্রতিবছর  বিপুল পরিমাণ টাকা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে আমাদের পিছনেই ব্যয় করে।  এর সব থেকে বড় সুফল হলো এতে দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির  হার আয়ত্তে থাকে। সুতরাং দেশের অভ্যন্তরীণ দেনা বৃদ্ধি পাওয়া  একদিক দিয়ে দেশের মানুষের জন্যই  ভালো।  এতে বাজারে টাকার সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের আয় রোজগার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা  বেড়ে যায়। তবে এর ফলে  অনেক জটীলতাও দেখা দেয়।  এ নিয়ে পরবর্তীতে লিখা হবে। 



এবার আমেরিকার বিষয়ে আসা যাক



আমেরিকার অর্থব্যবস্থায় বৈদেশিক ঋণ বলতে তেমন কিছুই নেই। প্রথমে আমরা যে 28  ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কথা বলেছি  এর পুরোটাই আমেরিকার অভ্যন্তরীণ দেনা।  মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী কারেন্সি হচ্ছে আমেরিকার ডলার।  এর পেছনে প্রথম কারণ তাদের  অর্থনীতির বিশালত্ত ,  বিপুল  প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ,  সামরিক বাহিনী  এবং বিশ্বব্যাপী লেনদেনের নিয়ন্ত্রক।  কিছু কমিউনিস্ট কান্ট্রি ছাড়া   প্রায় প্রতিটি দেশ  তাদের লেনদেন আমেরিকান সুইফট এর মাধ্যমে করে থাকে, 


আমেরিকার যে 28  ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি হয়েছে এই অর্থ কিন্তু আমেরিকার ভিতরেই আছে। আমেরিকার ফেডারেল সরকারের  খরচ এবং   ইনকাম এর দীর্ঘদিনের  পার্থক্যের মোট ফলাফল 28  ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।  যেহেতু এই 28 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আমেরিকার জনগণ এর পেছনে ব্যয় হয়েছে অর্থাৎ এর পুরোটাই আমেরিকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের হাতেই রয়েছে যেটা তারা  নিজের অজান্তেই  ব্যবহার করছেন। এতে করে এক কথায়  আমেরিকার জনগণই  সুবিধা ভোগ করেছে। 


এখন প্রশ্ন হতে পারে যে এতগুলো টাকা কি কোন মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করেনি? হ্যাঁ অবশ্যই করেছে,  তবে  এই টাকা সরকার এমনভাবে বাজারে  এনেছে  যে মুদ্রাস্ফীতি টা কারো গায়ে লাগেনি। এর প্রধান কয়েকটি কারণ হলো আমেরিকার অর্থনীতি বিশাল,  অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা সবার আগে। এতে করে দেখা যায় আমেরিকার সরকার যখন অতিরিক্ত টাকা বাজারে আনে  তখন সেটা আমেরিকান অভ্যন্তরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে  পাশাপাশি  অন্যান্য দেশেও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে  বড় করতে ভূমিকা রাখে। 


করোনার কারণে গত এক-দেড় বছর এ   আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে  এটাকে দূর করার জন্য  জো বাইডেন আমেরিকার, নতুন প্রেসিডেন্ট ০২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছে।  আমরা আগেই জেনেছি যে   নতুন বিনিয়োগ  অর্থনীতিতে   টাকার সার্কুলেশনে  গতি দেয়।  আর টাকার সার্কুলেশন   বৃদ্ধি পাওয়া মানেই  মানুষের অর্থনৈতিক  অবস্থা  সমৃদ্ধ হওয়ার পথ সৃষ্টি হওয়া । মজার কথা হল আমেরিকার নতুন এই বিনিয়োগ  শুধু আমেরিকার মানুষকে যে আশা জাগাচ্ছে  তা নয়। এককভাবে  আমেরিকা যেহেতু বাংলাদেশের সব থেকে বড় পণ্যের  আমদানিকারক, এবং প্রচুর বাংলাদেশি আমেরিকায় বসবাস করে । ফলে বাংলাদেশের সামনেও একটা বড় সম্ভাবনা আছে নিজের  অর্থনীতির যে   মন্দাভাব চলছে করোনার কারণে ,  একে  চাঙ্গা করে নেওয়ার। 



[আমেরিকার অর্থনীতির সামান্যতম পরিবর্তন কিভাবে পুরা বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে এ নিয়ে গবেষণা চলছে , খুব শিগগিরই প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ]